অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাম্প্রতিক চরম অমানবিক সন্ত্রাসী তৎপরতা ও এর প্রতি পশ্চিমাদের সর্বাত্মক সাহায্য সমর্থন এবং ইসলাম ও মুসলিম-বিদ্বেষী তাদের নানা আচরণ বিশ্ব-জনমতের কাছে তাদের আসল চেহারার নানা দিকসহ বেশ কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে তুলেছে।
পশ্চিমা সরকারগুলো যেভাবে ইসরাইলকে সামরিক ও রাজনৈতিক এবং নৈতিক ও প্রচারণাগত সহায়তা দিয়ে আসছে তাতে বোঝা যায় যে মজলুম ফিলিস্তিনিরা কেবল ইসরাইল নামক সন্ত্রাস ও বিষাক্ত ক্যান্সারেরই মোকাবেলা করছে না তারা গোটা পাশ্চাত্যের মধ্য-যুগীয় ক্রুসেডেরও শিকার। পাশ্চাত্য মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতার সমর্থক বলে দাবি করে আসলেও ফিলিস্তিনি ইস্যুতেও তাদের কপটতা নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। জার্মান ও ফরাসি সরকার ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের পক্ষে মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অবশ্য নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানকার জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে গণ-বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। জার্মান সরকার সেখানকার ছাত্রদের জন্য ফিলিস্তিনি রুমাল ব্যবহার ও ফিলিস্তিনকে মুক্ত কর শীর্ষক স্টিকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা করছে।
পাশ্চাত্য বাক-স্বাধীনতার নামে পবিত্র কুরআনে অগ্নি-সংযোগ করাকে ও মহানবীর (সা) প্রতি অবমাননাকে সমর্থন দিলেও ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের নিন্দা করাকে সেমিটিক জাতি-বিরোধী কাজ বলে উল্লেখ করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয় এবং কথিত হলোকাস্টের ঘটনা সম্পর্কে সন্দেহমুলক বক্তব্য প্রকাশ বা এ সম্পর্কিত অতিরঞ্জনকে চ্যালেঞ্জ করাও আইনত নিষিদ্ধ করে রেখেছে। পাশ্চাত্যের কোনো কোনো সরকার মুসলিম নারীদের হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। অথচ পাশ্চাত্য নিজেকে ধর্মীয় স্বাধীনতার সমর্থক বলে দাবি করে!
গাজায় শহীদদের সংখ্যা এখন ৫৭৯১ জন যাদের মধ্যে ২৩৬০ জন শিশু এবং ১২৯২ জন নারী অর্থাৎ গাযার ১৮ দিন ব্যাপী ইসরাইলী নির্বিচারে বোমাবর্ষণে শহীদদের প্রায় ৬৫% শিশু ও নারী। ১৬০০০ এরও বেশি আহত। গাজায় শহীদদের ও আহতদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই । কারণ ইসরাইল তার সর্বাত্মক বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা সরকারগুলো প্রকাশ্য সমর্থন নিয়েই। আর এ থেকেই পশ্চিমা শক্তিগুলোর মানবাধিকার-বিরোধ নৃশংস চেহারা স্পষ্ট হয়েছে আবারও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ ও যুদ্ধ-বিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে এখনও যুদ্ধ-বিরতির সময় হয় নি, কারণ যুদ্ধ-বিরতি করলে হামাসের সুবিধা হবে। তারা দাবি করছে ইসরাইল আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। অথচ ইসরাইল একটি অবৈধ ও দখলদার রাষ্ট্র যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী বৈধ। বিশেষ করে জাতিসংঘের আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইল পশ্চিম তীর ও পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহর দখল করে রেখেছে। পাশ্চাত্য মুখে মুখে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলে দাবি করলেও ফিলিস্তিনে সেখানকার আসল তথা স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে (বহিরাগতদের বাদ দিয়ে) গণভোটের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে।
গাজায় ইসরাইলের নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংস নির্বিচারে বোমাবর্ষণে ব্যবহৃত বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৮০শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। অতএব, গাজায় এ গণহত্যায় ও প্রজন্ম হত্যায় ইসরাইলের সাথে পূর্ণ শরীক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যাবতীয় অন্যায়, অপকর্ম ও যুদ্ধাপরাধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও অন্যায়, অপকর্ম ও যুদ্ধাপরাধ। তাই ইসরাইলের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এক সমান যুদ্ধাপরাধী। অধিকার থেকে বঞ্চিত মজলুম ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনি জাতির বিরুদ্ধে ইসরাইলের এ যুদ্ধ আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই যুদ্ধ । প্রেসিডেন্ট বাইডেন খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, ইসরাইল নামক কোনো রাষ্ট্র না থাকলেও আমরা তা তৈরি করে নিতাম! আর এ থেকেও ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্বের বিষয়টি স্পষ্ট।
আর হামাস তথা গাজাবাসীদের এ যুদ্ধ হচ্ছে স্বাধীনতার যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মরক্ষার যুদ্ধ। হামাস ও অন্য সকল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামীরা হচ্ছে মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধা। তাই তাদেরকে সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসবাদী বলাটা মহাঅন্যায়। কারণ তারা ১৯৪৮ সালে ব্রিটেন ও পাশ্চাত্যের পূর্ণ সমর্থনপুষ্ট বহিরাগত দখলদার হানাদার যায়নিস্ট ইহুদীদের হাতে তাদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। তাই তাদের অস্ত্র হাতে তুলে সশস্ত্র যুদ্ধ করার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ও বৈধ অধিকার রয়েছে। কারণ ফিলিস্তিন যা আজ ইসরাইল নামে পরিচিত তার আসল মালিক এই ফিলিস্তিনি জাতি তথা গাজা, জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের অধিবাসীরাসহ জর্দান, সিরিয়া, লেবানন, মিসর এবং অন্যান্য দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা। এসব যায়নবাদী ইহুদী ইসরাইলীরা সবাই বহিরাগত। এদের কেউই এ দেশের প্রকৃত আসল অধিবাসী নয়। অর্থাৎ এরা সবাই জবরদখলকারী দখলদার হানাদার যালেম বা অত্যাচারী। এরা এ পর্যন্ত দেড় লাখ (১৫০,০০০) ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে যাদের ৩৩০০০ ছিল শিশু । আর এই ১৮ দিনে ( ৭ অক্টোবর থেকে আজ ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ) সর্বশেষ এ আগ্রাসনে গাযায় ৫৭৯১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল।
যুদ্ধ ছাড়াও শান্তি–আলোচনা ও আপোসের সূযোগ নিয়েও ইসরাইল গত ৭৫ বছর ধরে জবর–দখল অব্যাহত রেখেছে ফিলিস্তিনের ভূমি
কেবল হামাসের সদস্যরা নয় প্রত্যেক গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তাই দখলদার হানাদার জবরদখলকারী ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ তাদের সবার বৈধ সর্বজন ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার। তারা যে কোনো সময় তাঁদের মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করতে পারে। আর এ কারণেই ৭ অক্টোবর ২০২৩ , হামাস ও সকল ফিলিস্তিনি সংগ্রামী দল ও সংগঠন ইসরাইলের বিরুদ্ধে তূফানুল আকসা অভিযান শুরু করেছে।
আর এর জবাবে দখলদার হানাদার যালেম অত্যাচারী জবরদখলকারী ইসরাইল গাজায় নৃশংস লোমহর্ষক ভয়ঙ্কর নির্মম গণহত্যা ও প্রজন্ম হত্যায় লিপ্ত রয়েছে। ময়দানে বীর ফিলিস্তিনি মুজাহিদ মুক্তি যোদ্ধাদের মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে বিমান শক্তির প্রাধান্য নিয়ে গাজয় নির্বিচারে পৈশাচিক ও নির্মম পন্থায় এলোপাথাড়ি লক্ষ্যবিহীন বোমাবর্ষণ করে অসহায় বেসামরিক অধিবাসী, নারী ও শিশু হত্যা হচ্ছে পরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। তাদের এসব হত্যাযজ্ঞ রক্ত-পিপাসু হিটলার, মুসোলিনি, চেঙ্গিস-হালাকু ও মোঙ্গলদেরকেও হার মানায়। এগুলো সব শাস্তিযোগ্য যুদ্ধাপরাধ যাতে ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোও শরীক।
উল্লেখ্য ইসরাইলে কোনো বেসামরিক নিরীহ ইসরাইলী জনগণ বা স্থানীয় ইহুদি জনগণ নেই বললেই চলে। ইসরাইলী ইহুদী জনগণের প্রায় ১০০ শতাংশই বহিরাগত দখলদার, হানাদার ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড জবরদখলকারী। তারা সবাই অবৈধ বাসিন্দা। আর এ সব তথাকথিত বেসামরিক ইহুদী ইসরাইলী বসতি স্থাপনকারী সবাই সশস্ত্র এবং সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তাই ইসরাইলে সবাই সামরিক এবং বেসামরিক জনগণও সামরিক। এই সব সশস্ত্র তথাকথিত বেসামরিক জনগণ বহু নিরীহ নিরপরাধ অধিকার বঞ্চিত ফিলিস্তিনীদেরকে অন্যায় ভাবে হত্যা করেছে এবং এখনও প্রায়ই মারধর ও হত্যা করে যাচ্ছে ইসরাইলী পুলিশ, নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায়। তাই সকল ইসরাইলীই জালেম, অপরাধী, যুদ্ধাপরাধী, দখলদার, হানাদার ও জবরদখলকারী। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ও যুদ্ধ করার অধিকার হামাসসহ সকল ফিলিস্তিনির রয়েছে। অতএব কোনো ভাবেই হামাস ও ফিলিস্তিনিদের আগ্রাসনকারী ও সন্ত্রাসী বলা যাবে না বরং ইসরাইল এবং তার সমর্থক পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারীরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোই মূলতঃ সন্ত্রাসী।
মজলুমকে জালেম এবং জালেমকে মজলুম দেখানোর অপচেষ্টা করছে ইসরাইল ও পশ্চিমারা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অতএব আমাদের সবার সাবধান হতে হবে । আমাদেরকে মজলুম গাজাবাসীদের সর্বাত্মক কার্যকর সাহায্য করতে হবে এবং যালেম ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষকদের মোকাবেলা করতে হবে।
আর যেহেতু ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে মুসলিম ভূখণ্ড ফিলিস্তিন আক্রমণ ও জবরদখল করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে (যাদের অধিকাংশই মুসলিম) হত্যা করে ও মেরে কেটে তাদের আবাসস্থল ও মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে সেহেতু ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষকরা সবাই ইসলামী আইন অনুযায়ী হারবি কাফির অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা বৈধ। তাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার হামাসসহ সকল মুসলিম উম্মাহর রয়েছে বলে বিশিষ্ট মুসলিম আলেম ও চিন্তাবিদরা মনে করেন।
শান্তি আলোচনার নামে ফিলিস্তিনিরা এ পর্যন্ত কোনো অধিকারই ফিরে পায়নি, বরং তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমি ও সম্পদ হারিয়েছে। গত ৭০ বছরে ইসরাইল লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে যাদের অন্তত ত্রিশ হাজারই ছিল শিশু। তাই সশস্ত্র প্রতিরোধ ছাড়া ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও নির্যাতনমুক্ত করার কোনো পথ খোলা নেই।
সর্বশেষ খবর হল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা অবরুদ্ধ গাজা থেকে এখনও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ইসরাইলি অবস্থানে মাঝে মধ্যে রকেট বর্ষণ করছেন। তাদের অনেক রকেট তেল-অবিবসহ কয়েকটি শহরে ইসরাইলিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ওদিকে উত্তর-সীমান্তে ইসরাইলি সেনা অবস্থানে লক্ষ্য করে হানাদার ইহুদিবাদী সেনা অবস্থানে নিখুঁত গোলা বর্ষণ করে এবং অনেক ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করে ও ইসরাইলি সমরাস্ত্র ও সেনা স্থাপনা ধ্বংস করে ইসরাইলকে বেশ আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ।
Leave a Reply